বিদ্যুৎ আদালতের সাজা কমানোর দাবিতে গাড়ী চালকের ঘুষ নেয়ার অভিযোগ
ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার টাকা ও সাজা কমানোর আশ্বাসে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২ এর গাড়ী চালক সাদ্দাম এর বিরুদ্ধে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মানিকের দোকান ও আবাসিক বসত বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে বেসপ্লেটহীন মিটার ও মিটারের যন্ত্রাংশ পায় বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২ (বিউবো)এর সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী দলের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অপরাধে বিবাদীর বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আইনে চার লাখ ক্ষতিসাধনের মামলা দায়েরসহ সমন জারি করা হয়। মামলা নিষ্পত্তির আশ্বাসে বিবাদীর কাছ থেকে অগ্রীম তিন লাখ টাকা ঘুষ নেন গাড়ী চালক সাদ্দাম বলে জানিয়েছেন বিবাদী মানিক মানিয়ার ওরফে হোসেন।
বিজ্ঞাপন
৩২(১)/৩৩/৩৮ ধারায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ও আব্দুল আজিজের ছেলে মানিক ওরফে মানিয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের বিদ্যুৎ আইনের দায়েরকৃত মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিবাদীর দোকান ও আবাসিক বসত বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে বেসপ্লেটহীন মিটার ও মিটারের যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। এ সময় তার বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং এর বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেম্পারিং ও পাশব্রু সংযোগ ব্যবহার করে বিউবোর আনুমানিক চার লাখ ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। ওইদিন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ বিদ্যুৎ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রেজোয়ানা রশীদ সাক্ষরিত আসামীর প্রতি জারীকৃত সমন এ আগামী ২০ মার্চ বিবাদী অথবা উকিলের মাধ্যমে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মামলার বিবাদী মানিক ওরফে মানিয়ার হোসেন বলেন, আমার বৈদ্যুতিক দোকান আর বাড়ির সংযোগ একটি। এছাড়াও স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় বৈদ্যুতিক সমস্যায় পরে আমার স্মরণাপন্ন হন। সমস্যাগুলোর বেশির ভাগই হয় মিটারে। তবে বিকল হওয়া মিটার মেরামত করা সম্ভব নয় বলে আমি নতুন মিটার লাগিয়ে সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করি। বিকল হওয়া তিন/চারটি মিটার আমার বাড়ি ও দোকানে পান পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ অপরাধে আদালতের বিচারক মামলা দায়ের করাসহ একটি সমন দেন। আমার কাছে মিটার রাখা অপরাধ হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমি ভীত থাকার সুযোগ নিয়ে অভিযানে থাকা বিদ্যুৎ অফিসের গাড়ী চালক সাদ্দাম আমাকে দেড় বছরের জেল আর ১৭ লাখ টাকা জরিমানার ভয় দেখান। এ জরিমানা আর জেল থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফোন দিলেও এ সাজা মওকুফ হবে না বলে তার ব্যক্তিগত নম্বরটি আমাকে দিয়ে যান। ওই দিন বিকেলে গাড়ী চালক সাদ্দামের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি ফোনে কথা না বলে দ্রুত সাক্ষাত করতে বলেন। আমি বেবীস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়ী চালক সাদ্দামের সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে মামলা থেকে মুক্ত করাসহ সাজা মওকুফ করার জন্য নয় লাখ টাকা দাবি করেন। আমি বাধ্য হয়ে ওই দিন বিকেলেই একাধিক স্বাক্ষী নিয়ে তিন লাখ টাকা গাড়ী চালক সাদ্দামকে দিই। এরপর আমি আদালত থেকে মামলার নকল তুলে দেখতে পাই সেখানে চার লাখ টাকা ক্ষতিসাধনের মামলা করা হয়েছে। দায়েরকৃত মামলার জরিমানার বিষয়টি গাড়ী চালক সাদ্দাম আর উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ্ জিহাদকে জানাই। এ সময় তারা বলেন. এত টাকা আমি পরিশোধ করতে পারবোনা বলে তারা অনুরোধ করে মামলার ক্ষতিসাধন চার লাখ টাকা হয়েছে সেটি নির্ধারণ করতে সহায়তা করেছেন।
টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত গাড়ী চালক আসাদুজ্জামান সাদ্দাম। তিনি বলেন, আমি একজন গাড়ী চালক, আমার পক্ষে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা বা জরিমানা মিমাংসার ক্ষমতা আছে কি ? তাহলে কেন আমি টাকা নিব আর টাকা নেয়ার কোন প্রমাণ আছে কিনা সে বিষয়টিও জানতে চান তিনি। এর কিছুক্ষণ পরেই তার শশুর আমিনুর সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে সংবাদ প্রচার নিয়ে সতর্ক করাসহ এক সংবাদকর্মীকে চাঁদাবাজ বলে উল্লেখ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
টাঙ্গাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২ (বিউবো) এর সহকারি প্রকৌশলী মো. আব্দুল আল আজমাইন বলেন, আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনাকালে আলোকদিয়ার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মানিকের দোকান ও আবাসিক বসত বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণে বেসপ্লেটহীন মিটার ও মিটারের যন্ত্রাংশ পাই। একই সময় তার বিরুদ্ধে মিটার টেম্পারিং এর অভিযোগ পাওয়া গেছে। টেম্পারিং ও পাশর্^ সংযোগ ব্যবহার করে বিউবোর আনুমানিক চার লাখ ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। এ কারণে পরিচালিত অভিযানে আমি বাদী হয়ে মানিকের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ আইনে মামলা করি। এ ব্যাপারে ২০১৮ সালের বিদ্যুৎ আইন ৩২(১)৩৩/৩৮ ধারায় মামলা নং ১০৯/২৩ দায়ের করাসহ সমন জারি করেছেন আদালতের বিচারক।
তিনি আরও জানান, জরিমানা টাকা নগদ গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। নির্দেশনা অনুযায়ি ব্যাংকের মাধ্যমে জরিমানা টাকা আদায় করাসহ বিদ্যুৎ বিভাগ পরিশোধের একটি প্রত্যায়ন দেয়ার বিধান রয়েছে। পরিচালিত ওই অভিযানে থাকা গাড়ী চালক সাদ্দাম বিবাদীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
ফালতু কথা উল্লেখ করে টাঙ্গাইল বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ ২ (বিউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহগির হোসেন জানান, হাতে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই। যদি বিদ্যুৎ অফিসের গাড়ী চালক এ ধরণের প্রতারণা করে থাকেন, তাহলে ভুক্তভোগী গ্রাহককে ওই চালকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
টাকা পরিশোধের নিয়ম সম্পর্কে তিনি জানান, বিদ্যুৎ অফিস থেকে গ্রাহককে একটি বিল করে দেয়া হবে। গ্রাহক সেই বিল অনুপাতে টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করবেন। গ্রাহক ব্যাংকের ওই পরিশোধের স্লিপ আদালতে জমা দিবেন। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ বিভাগ গ্রাহককে একটি প্রত্যায়ন দেবে।
আরিফ উর রহমান টগর টাঙ্গাইল
তারিখ-২৩.০২.২৩ইং।