ব্যক্তি মালিকাধীন জমিতে সরকারি ঘর নির্মাণের উদ্দেশ্যে মাটি ভরাটের অভিযোগে আদালতে মামলা
ব্যক্তি মালিকাধীন জমিতে গৃহায়ন প্রকল্পের সরকারি ঘর নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন আব্দুস ছাত্তার মিয়া নামের এক ভুক্তভোগী। সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস কালিহাতীকে আসামী করে কালিহাতী সহকারি জজ আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। আদালত থেকে দায়েরকৃত মামলায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া সত্বেও বন্ধ হয়নি ওই জমির মাটি ভরাট কার্যক্রম।
বিজ্ঞাপন
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌর শহরের উত্তর কালিহাতী এলাকায়।
ভূমির মালিক নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ও সাবেক মেয়রের ভাই হওয়ার ক্ষোভে বর্তমান কালিহাতী পৌরসভার মেয়র ও যুবলীগ সভাপতির প্ররোচনায় সরকারি কর্মকর্তারা ওই ভূমি দখলে নেমেছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগি পরিবার। এ নিয়ে হতাশ ও জমি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন ভুক্তভোগী ওই ভূমির মালিক।
বিজ্ঞাপন
কালিহাতী সহকারি জজ আদালতের দায়েরকৃত মামলায় জানা যায়, কালিহাতী পৌর শহরের কালিহাতী মৌজার তপশীল বর্ণিত সাবেক ৮৭ নং দাগের মালিকা দাবিকৃত ০২.৫০ শতাংশসহ মোট ২০ শতাংশ ভূমির জোতদখলকার মুচিরাম মাঝি। পরবর্তীতে ওই ভূমি কালু মাঝি, টগা মাঝি ও বিন্দুবাসিনী বেওয়া ১ আনা হিসাবে সেঃ মেঃ ১০৬ নং খতিয়ানে রেকর্ড লিপিত হয়ে সত্বেও লিখন চুড়ান্ত হয়। ১ আনা সত্বেও বিন্দুবাসিনী বেওয়া মৃতু্যবরণ করায় একমাত্র ছেলে সামী তিলক দাস সত্ব প্রাপ্ত হন। সামী তিলক দাসের মৃতু্যর পর দুই লক্ষণ চন্দ্র তিলক দাস ও অক্ষয় চন্দ্র তিলক দাস সত্ববান ও দখলকার থাকেন। তাদের নামেই ১৫৯ নং খতিয়ানে ১৯৬২ সনে এস.এ রেকর্ড হয়। লক্ষণ চন্দ্র তিলক দাস নিঃসন্ত্মান অবস্থায় মৃতু্যবরণ করায় একমাত্র ভাই অক্ষয় চন্দ্র তিলক দাস তৎত্যক্তাংশ প্রাপ্ত হন। অক্ষয় চন্দ্র তিলক দাস করায় একমাত্র ছেলে সুনীল চন্দ্র রাজবংশী ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি প্রাপ্ত হন। এরপর ১৯৯৯ সালে ১৭ মে ৩৫৭৪ নং এওয়াজনামা দলিলমূলে সাবেক ৮৭ দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি মামলার বাদী আবুস ছাত্তার বরাবর হস্তান্তর করেন। মামলার বাদী আবুস ছাত্তার তপশীল বর্ণিত সাবেক ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমি স্বত্ববান ও দখলকার হন। বর্তমানে বি.আর.এস জরিপে আব্দুস ছাত্তার এর নামে ৮৭ নং দাগের ০২.৫০ শতাংশ ভূমির মাঠ পর্চা প্রস্তুত হয়।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাই নদী ঘেঁষা কালিহাতী পৌর শহরের উত্তর কালিহাতী এলাকার দায়েরকৃত মামলার ভূমিতে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। নদী থেকে উত্তোলনকৃত মাটি দিয়ে ভূমি উঁচুকরণে কাজ করছেন আট জন নারী শ্রমিক।৬০ টাকা ঘন্টা হিসেবে সরকারি কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন নারী শ্রমিক মাধবী রাজবংশী।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় প্রতিবেশী সম্ভু রাজবংশী বলেন, জমিটি সাবেক মেয়র আব্দুর জব্বার মিয়াদের। এই জমিতে তারা মাটি মজুদ রাখাসহ নানা ধরণের কাজে ব্যবহার করেছেন, সেটি আমরা দেখেছি।
যুদ্ধের আগে থেকে আমাদের এখানে বসবাস। আমার স্বামী ও তারা একই সময় হিন্দুদের জমি কিনেছেন। তবে তারা কতটুকু জমি কিনেছিলেন সেটি বলতে পারবোনা। এছাড়াও সে সময় এই এলাকার অধিকাংশ জুড়ে ছিল নদী বলে জানান প্রতিবেশী ফিরোজা শহীদ সিদ্দিকী।প্রতিবেশী বাচ্চু সিদ্দিকী বলেন, জমিটি কালিহাতী পৌরসভার সাবেক মেয়র জব্বার সাহেবদের ছিল বলে আমরা জানতাম। হঠাৎ একদিন দেখি সরকারি লোকজন এসে জমিটি খাস বলে দাবি করাসহ ঘর নির্মাণের জন্য মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। জমির প্রকৃত মালিকানা নির্ণয়ের দাবি জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
জমির দাবিদার আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ভাতিজা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, জমিগুলো আমাদের ক্রয়কৃত। প্রায় বিশ বছর যাবৎ ওই জমিগুলো আমরা ভোগ দখল করছি এবং কিছু জমি বিক্রিও করেছি। হঠাৎ একদিন জানতে পারি, আমাদের জমি ভরাট করা হচ্ছে। আমাদের ৮৭ নং দাগের রেকর্ড ও দলিলমূলে প্রাপ্ত ৫ শতাংশ জমিতে জোরপূর্বক সরকারিভাবে গৃহায়নের ঘর তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা কাগজপত্র নিয়ে জমিটি আমাদের বুঝানোর চেষ্টা পরও কর্মকর্তা সেটি কানে নেননি। এর প্রতিবাদে আমরা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও সার্ভেয়ার সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিস কালিহাতীকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়ার পরও কাজ বন্ধ না করে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জমিটি দখলে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও পৌরসভার মেয়র জড়িত বলে দাবি করেছেন তিনি।বক্তব্যে নেয়ার জন্য একাধিকবার সরকারি নম্বরে ফোন করা হলেও রিসিভ করেন কালিহাতী সহকারি কমিশনার (ভূমি) মো. নাহিদ হোসেন।
বিজ্ঞাপন
কালিহাতী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নুরুনবী সরকার বলেন, জমিটি পৌর এলাকায় হলেও এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে জড়িয়ে অহেতুক প্রশ্ন তোলা হচ্ছে দাবি করে তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গৃহায়ন প্রকল্পের কাজ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভূমি) আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। জমিটি সরকারি নাকি ব্যক্তি মালিকাধীন সে বিষয়টি উনারই নিশ্চিত করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুসেইন জানান, জমিটি সরকারি। এ কারণে আমরা জমিতে মাটি ভরাট ও গৃহায়নের ঘর করার কাজ করছি। জমিটি ব্যক্তি মালিকাধীন দাবি করে মামলা হওয়ার কথাসহ বিষয়টি জানতে আদালতের নোটিশ পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন তিনি। আদালতের পাঠানো নোটিশের জবাব দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আরিফ উর রহমান টগর