টাঙ্গাইলের এক নারী উদ্যোক্তাকে মারধর, ও লুটপাটের অভিযোগ
টাঙ্গাইলে মারধরসহ দোকান ও বাড়ি থেকে দুই লাখ দশ হাজার টাকা লুটের অভিযোগ তুলেছেন ছালমা নামের এক নারী উদ্যোক্তা। গত ৬ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাঙ্গাইল পৌর শহরের আকুরটাকুর পাড়ার তালতলায় ঘটনাটি ঘটে। রাতেই টাঙ্গাইল সদর থানায় ঘটনায় জড়িত চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী উদ্যোক্তা।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী নারী উদ্যোক্তা শামসুন্নাহার ছালমা (৪৫) ওই এলাকার আজিজুর রহমান আলহাজ্ব এর স্ত্রী। ছালমা আরাভ হস্ত শিল্প নামের কাপড়ের দোকান মালিক।
সুদের মূল টাকাসহ লাভের কিছু টাকা ফেরত দেয়ার পরও আরও টাকা পাওয়ার দাবি তুলে বিবাদীরা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে জানান ওই নির্যাতিত নারী উদ্যোক্তা।
দায়েরকৃত অভিযোগের বিবাদীরা হলেন- আকুর টাকার মুসলিমপাড়ার শাহ আলমের স্ত্রী ফাহিমা (৪০), মেয়ে শারমিন (২৫), তিশা (১৯) ও শাহ আলমসহ অজ্ঞাত ১৫জন।
অভিযোগ ও বাদি ছালমার দেয়া তথ্যে জানা যায়, পারিবারিক নানা সমস্যা জনিত কারণে প্রায় তিন বছর আগে পাঁচ হাজার টাকা সুদ দেয়ার শর্তে বিবাদী ফাহিমার কাছ থেকে চেক মারফত এক লাখ টাকা নেন নারী উদ্যোক্তা সালমার স্বামী আজিজুর রহমান আলহাজ্ব। গত এক বছর আগে আসল টাকাসহ সুদের টাকা পরিশোধ করে বন্ধককৃত চেকটিও ফেরত নেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
লেনদেন শেষ হওয়ার পরও বিবাদী আমাদের কাছে আরও লাভের টাকা পাবে বলে দাবি করে আসছেন। নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করাসহ লাভের টাকার নামে প্রায়ই আমার দোকান থেকে কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ গত রমজান মাসে এসে বিবাদীরা দুই হাজার টাকার কাপড় নিয়ে গেছে। গত ৬ জুন রাত সাড়ে আট টার দিকেও বিবাদীরা দলবদ্ধ হয়ে আমার কাছে আসে। আমি তাদের দোকানে রেখে পারিবারিক প্রয়োজনে বাসায় যাই। এ সময় দোকানে বিবাদীদের উপস্থিতিতে আমার এক ভাগনে আর ভাগনে বউকে রেখে যাই। আমার পিছু নেয় বিবাদীদের কয়েকজন। কয়েকজনকে বাসার নিচে রেখে ফাহিমা, মেয়ে শারমির ও তিশাসহ কয়েকজন আমার সাথে সাথে বাসায় যায় ও সুদের অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। আমি আর লাভের টাকা দিবনা বলায় বিবাদী ফাহিমা, মেয়ে শারমির ও তিশা আমাকে মারধর করতে শুরু করে। এ সময় তারা আমার পরনে থাকা কাপড় ছিড়ে ফেলে। আমার স্বামী আমাকে উদ্ধার করতে আসায় তারা তাকেও মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা আমার ঘরে থাকা এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে বাসা থেকে নেমে আসে। এরপর তারাই আমার দোকানে যান ও দোকানের কাপড় বস্তা ভর্তি করতে থাকে। আমার ভাগনে তাদের বাঁধা দেয়া কাপড় নিতে না পারলেও দোকানে ক্যাশবাক্সে ঈদের মালামাল কেনার জন্য রাখা এক লাখ দশ হাজার টাকাও নিয়ে নেয়। এ সময় আমার ডাকচিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে বিবাদীরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মেহেদী হাসান শান্ত বলেন, আরাভ হস্ত শিল্প আমার মামী ছালমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমি নতুন বিয়ে করেছি। বউ নিয়ে মামীর দোকান থেকে কাপড় কিনতে আসি। এ সময় বিবাদীদের দুইজনের একজন দোকানে ঢুকে বস্তায় কাপড় তুলতে শুরু করে আর একজন ক্যাশ কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। আমি তাদের বস্তায় কাপড় তুলতে না করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর দুইজনই দোকান থেকে বের হয়ে যান। এ সময় বেশ কয়েকজন ছেলে দোকান ও মামীর বাসা ঘিরে রেখেছিল। মামী দোকানে আসার পর জানতে পারি কাউন্টারে রাখা মামীর দোকানের এক লাখ দশ হাজার টাকা তারা নিয়ে গেছে।
অভিযুক্ত ফাহিমা বলেন, এক লাখ টাকা আমার মামী ছালমাকে এনে দিই। ওই টাকার মাত্র সত্তর হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন তিনি। লাভসহ এখনও মূল টাকার ত্রিশ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। এরপর তিনি আবার দোকানে মালমাল তুলবেন বলে এনজিও বুরো বাংলাদেশ থেকে আমার মাধ্যমে এক লাখ টাকা উত্তোলন করেন। যার প্রতি মাসে কিস্তি সাড়ে ৫ হাজার টাকা। গত ৬ জুন আমি কিস্তি সেই টাকা চেতে যাই। মামী আমাকে কোন টাকা দিবেন বলে জানিয়ে দেন। এ সময় আমার মেয়েরা প্রতিবাদ করায় মামা আর মামী মিলে আমার মেয়েদের মারধর করেছেন। আমার আপন মামা আর মামী বলে তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ফেরদৌস জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।