আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা সৈনিক শামছুল হকের ৫৮তম মৃত্যুবার্ষিকী
কালের বার্তা অনলাইন ডেক্স : টাঙ্গাইলে আওয়ামী (মুসলিম) লীগের জন্ম এই টাঙ্গাইলে। আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা মরহুম শামছুল হকের ৫৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলে ১১ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। শামসুল হক ফাউন্ডেশন ও স্বজনদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল জেলা শহরের প্রবেশ দার দৃষ্টিনন্দন শামসুল হক তোড়নে বেলা ১০ টায় তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন ও দোয়ার মাধ্যমে এ কর্মসূচী শুরু হয়। এরপর টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার কদিম হামজানি এলাকায় আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ভাষা সৈনিক শামসুল হকের কবরে তার পরিবার ও ভক্তঅনুরাগীদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি, মরহুমের রহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও তার জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন এর সভাপতিত্বে, অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শামসুল হক ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মোস্তফা লাবু, শামসুল হক স্মৃতি পরিষদের সভাপতি কৃষক আব্দুল গফুর বেপারী ও হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক মোঃ রাশেদ খান মেনন (রাসেল), শামসুল হক পরিষদের সভাপতি মাসুম পারভেজ হক’সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
বিজ্ঞাপন
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. সাইফুল ইসলাম স্বপন এর বিবৃতি অনুযায়ী জানা যায়, আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও ভাষা আন্দোলনের শীর্ষ নেতার শামসুল হকের জন্ম টাঙ্গাইলের এলাসিন মাতুলালয়ে নিজ গ্রাম মাইঠান- টেউরিয়া। তিনি জাহ্নাবী হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক এবং করটিয়া সাদ’ত কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু রাজনৈতিক কারনে তা সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। তিনি ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। ৪০ এর দশকে তিনি নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগ ও বঙ্গীয় মুসলিম লীগের ১৫০ মোগলটুলী পার্টি হাউজকেন্দ্রিক (ঢাকা) তরুন কর্মীদের নেতা ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি সেখানেই থাকতেন। সে সময় ঢাকার আহসান মঞ্জিল বা খাজা নেতৃত্বের বিপরীতে তারা সোহরাওয়ার্দী- আবুল হাশিম গ্রুপের সমর্থক ছিলেন। দেশ বিভাগ এর পূর্বে তার নেতৃত্বে ঢাকা জেলা মুসলিম লীগ খাজাদের নিয়ন্ত্রনমুক্ত হয়। ঢাকায় পাকিস্তান আন্দলনের তিনি প্রধান সংগঠক ছিলেন। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন খুবই নিবেদিত ও আদর্শবান। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি ১৯৪৯ সালের এপ্রিল মাসে টাঙ্গাইলে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রাথী ও করটিয়ার জমিদার পরিবারভুক্ত খুররম খান পন্নিকে পরাজিত করে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ‘মওলানা ভাসানী’ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও শেখ মুজিব যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ‘মুল দাবি’ নামে আওয়ামী লীগের প্রথম ম্যানিফেস্টো তারই রচিত। ‘৪৮ ও ৫২’-এর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন এবং এ কারনে তাকে কারাবরণ করতে হয়। ১৯৪৯ ও ১৯৫২ সালে দু’দফায় তিনি অনেকদিন কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তার মস্তিষ্ক-বিকৃতি ঘটে। এরপর বেশ কয়েক বছর বেঁচে থাকলেও তিনি আর স্বাভাবিক হননি। ইডেন কলেজের ইংরেজি বিষয়ের অধ্যাপিকা আফিয়া খাতুন ছিলেন তার স্ত্রী। শামছুল হক যখন ৫২ -এর ভাষা আন্দোলনে জেলে যান, তখন তিনি তাকে ছেড়ে চলে যান। সংসার জীবনে শামছুল হকের ২ সন্তান রয়েছে। সন্তানদ্বয় -(১) উম্মেবতুল তাজমা তাহেরা (ড.শাহিন), (২)-উম্মেবতুল ফাতেমা জাহুরা (ড.শায়কা)। তারা বর্তমানে আমেরিকান নাগরিক। জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে বর্তমানে NASA-য় কর্মরত। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি হঠাৎ নিখোঁজ হন এবং দীর্ঘ ৪২ বছর ২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ থাকেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে জানা যায় হক সাহেব ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর, শনিবার বাদযোহর, যোগারচরের বিখ্যাত কংগ্রেস নেতা মরহুম মৌ.মহির উদ্দিন আনছারীর বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। মরহুম আনছারীর ছেলেরা পূর্ব পরিচিত অসুস্থ হক সাহেবকে বাড়ীতে রেখে সেবা যত্ন ও চিকিৎসা করান। ৭ দিন চিকিৎসার পর নেতার মৃত্যু হলে জিগাতলার হুজুর শামস উদ্দিন মওলানা কতৃক জানাজা শেষে নেতাকে কদিমহামজানি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিজ্ঞাপন
তার বিখ্যাত বই আজও রাজনীতিকদের মনে দাগ কেটে আছে- সেটি হোল ‘বৈপ্লবিক দৃষ্টিতে ইসলাম’ দার্শনিক আবুল হাশিম, হযরত আল্লামা আজাদ সোবহানী ও টাঙ্গাইলের এডভোকেট আব্দুল করিম খান সাহেব বইটি লিখতে অনুপ্রেরণা যুগীয়েছিলেন। শামছুল হকের সাথে শেখ মুজিবের এই বইটির মাধ্যমে এরিস্টটল-প্লেটোর মত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই দু ‘জন ছিলেন একই মুদ্রার দুই পিঠ। ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠিত হলে জেলা তোরণের নামকরন ‘শামছুল হক তোরণ’ করা হয়। ১৯৭২ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম তালুকদার এলেঙ্গায় শামছুল হক কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
বিজ্ঞাপন
১০ অক্টোবর ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলাসিন ধলেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত সেতুটি ‘শামছুল হক সেতু’ নামকরণ করেন। ২০০৬ সালে থানাপাড়া টাঙ্গাইলে গরীবের হসপিটাল খ্যাত শামছুল হক মেমোরিয়াল হসপিটাল প্রতিষ্ঠিত হয় যার প্রচার প্রসারের প্রেক্ষিতে ২০০৭ সালে শামছুল হকের কবরের সন্ধান মেলে। এরপর সাংবাদিক মহব্বত হোসেন, সাংবাদিক মাসুম ফেরদৌস, ডা.আনছার আলী তালুকদার’ সহ এক ঝাঁক সাংবাদিক, জোগারচর-কদিমহামজানীর গন্যমান্য বয়জেষ্ঠ্য ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকারে যারা হক সাহেবকে দাফন কাফন ও জানাজা অনুষ্ঠানে শরিক হন- মাসব্যাপি তাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নেতার মৃত্যু এবং কবরস্থানের সঠিক ঠিকানা। শ্রদ্ধান্জলি জননেতা শামছুল হক (১৯১৮-১৯৬৫)।