টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র নিহত আহত ঘটনার মামলার ৩ আসামি গ্রেফতার।
টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র নিহত আহত ঘটনার মামলার অন্যতম আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫), সহিদুল ইসলাম সমেজ (৬০), এবং সন্দিগ্ধ পলাতক আসামি মোঃ আশরাফুল আলম বাচ্চু (৬৪) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল।
বিজ্ঞাপন
গত ০৪ আগস্ট ২০২৪ খ্রি. তারিখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহস্রাধিক ছাত্র জনতা গোড়াই হাইওয়ে থানা, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল এর সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাকা রাস্তার উপর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করা কালে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতনামা ৪০০-৫০০ লোক দুপুর অনুমান ০২.৩০ ঘটিকা হতে ০৩.৩০ ঘটিকার মধ্যে যে কোন সময় পরস্পর যোগসাজসে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে বে-আইনি জনতায় দলবদ্ধ হইয়া আগ্নেয়াস্ত্র এবং দেশীয় অস্ত্র রামদা, চাপাতি, কুড়াল, লাঠি, বল্লম, ইট, পাথর নিয়া সজ্জিত হইয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র জনতার উপর অতর্কিতভাবে হামলা করে। এসময় হামলাকারীদের মধ্য থেকে ছোড়া গুলিতে ইমন(২৩), পিতা- মৃত জুলহাস মিয়া, সাং- নলিন, থানা- গোপালপুর, জেলা-টাঙ্গাইল গুরুতর আহত হলে আন্দলনকারী সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে গত ১৮/০৮/২০২৪ খ্রিঃ তারিখে ইমন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
উপরিউক্ত শান্তিপূর্ণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের উপর হামলায় নিহতের ঘটনায় মৃতের ভাই সুমন মিয়া বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। যা মির্জাপুর থানার মামলা নং-৯, তারিখ- ২২আগস্ট ২০২৪, ধারা-১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩০২/১৪৪/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০। মামলাটি রুজুর পর থেকে আসামি গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল ক্যাম্প গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র মোঃ ইমন নিহতের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও গোপন সোর্সের মাধ্যমে আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র্যাব-১৪, সিপিসি-৩ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মনজুর মেহেদী ইসলাম এর নেতৃত্বে এবং স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মোঃ আব্দুল বাছেদ এর উপস্থিতিতে র্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল গত ০৭/১০/২০২৪ খ্রিঃ. তারিখ অনুমান ১৮.০০ ঘটিকায় টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানাধীন ডুবাইল সাকিনস্থ নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রির এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এজাহারনামীয় আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫), সাধারণ সম্পাদক, পাকুল্ল্যা বাইপাস সিএনজি শ্রমিক ইউনিয়ন টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করে এবং একই তারিখ ১৬.৩০ ঘটিকায় মির্জাপুর থানাধীন দুল্লাবেগম এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সন্দিগ্ধ পলাতক আসামী মোঃ আশরাফুল আলম বাচ্চু (৬৪), সভাপতি, ৮নং ভাতগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, মির্জাপুর থানা’ কে গ্রেফতার করেন। উক্ত হত্যা মামলার অন্যান্য আসামি গ্রেফতারে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতারকৃত আসামিদেরকে আদালতে সোর্পদ করতে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পৃথক অভিযানে টাঙ্গাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র জনতার উপর হামলার ঘটনায় রুজুকৃত মামলায় অন্যতম আসামি সহিদুল ইসলাম সমেজ (৬০) (সভাপতি, ০২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, টাঙ্গাইল পৌরসভা) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব।উল্লেখ্য, মামলার বাদী মোঃ লাল মিয়া (৩০), পিতা- আবু তালেব, সাং- নতুন বাসস্ট্যান্ড, থানা ও জেলা-টাঙ্গাইল গত ০৪আগস্ট ২০২৪ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র জনতার মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি প্রেসক্লাব হইতে টাঙ্গাইল শহরের জেলা সদর রোডে বিবেকানন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর সম্মুখে পৌঁছামাত্র এজাহারনামীয় আসামীগনসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ আসামীগন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বে-আইনী আগ্নেয়াস্ত্র পিস্তল, শর্টপান এবং দেশীয় অস্ত্র, রামদা, চাপাতি, হাত কোড়াল দ্বারা সজ্জিত হইয়া ছাত্র জনতার মিছিল পন্ড ও আন্দোলনকারীদের খুন, জখমের উদ্দেশ্যে সকাল অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় অতর্কিত ভাবে হামলা করে। আসামি ০২নং মোঃ জোয়াহেরুল ইসলামের (সাধারণ সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগ) উপস্থিতিতে হামলাকারীদের মধ্য থেকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করিলে বাদীর বাম পায়ে হাটুর নিচে লাগিয়া পা ভেদ করিয়া গুলি বাহির হইয়া গেলে তিনি রক্তাক্ত জখম অবস্থায় রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এমতাবস্থায় মিছিলে অংশগ্রহনকারী ছাত্র জনতা বাদীকে টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করে এবং হাসপাতালের সার্জারী বিভাগ ০৬নং ওয়ার্ডে আশংঙ্গা জনক অবস্থায় ভর্তি করে। পরবর্তীতে বাদী কিছুটা সুস্থ হইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক (৮০), সভাপতি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ‘সহ ২৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০০-১৫০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে টাঙ্গাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। যাহা সদর থানার মামলা নং-৩০/৩০০, তারিখ-৩১/০৮/২০২৪, ধারা-১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৩/৩২৬/৩০৭ পেনাল কোড-১৮৬০।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত লাল মিয়া (৩০) আহতের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং আসামিরা গ্রেফতার এড়াতে ঘটনার পর পরই এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যায়।
বিজ্ঞাপন
উক্ত আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল ক্যাম্প গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আসামিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করে। আসামি সহিদুল ইসলাম সমেজ (৬০), সভাপতি, ০২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ টাঙ্গাইল পৌরসভা, টাঙ্গাইল এর অবস্থান নিশ্চিত হয়ে র্যাব-১৪, সিপিসি-৩ কোম্পানী কমান্ডার মেজর মনজুর মেহেদী ইসলাম এর নেতৃত্বে এবং স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি মোঃ আব্দুল বাছেদ এর উপস্থিতিতে একটি চৌকস আভিযানিক দল ০৭/১০/২০২৪ খ্রিঃ. বিকাল অনুমান ১৭.১০ ঘটিকায় টাঙ্গাইল জেলার সদর থানাধীন ধুলেরচর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত মামলার এজাহারনামীয় ১২১নং আসামী ১। সহিদুল ইসলাম সমেজ (৬০) (সভাপতি, ০২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, টাঙ্গাইল পৌরসভা), পিতা- মৃত আঃ করিম, সাং- বল্লা, থানা- টাঙ্গাইল সদর, জেলা- টাঙ্গাইল’কে গ্রেফতার করে। উক্ত হত্যার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।ধৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করার নিমিত্তে টাঙ্গাইল জেলার সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল ক্যাম্প কোম্পানী অধিনায়ক উপ-পরিচালক মেজর মনজুর মেহেদী ইসলাম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান র্যাব তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস, মাদক, অস্ত্র, অপহরণ, হত্যা, নারী নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আপোষহীন অবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে যা দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ কর্তৃক ইতোমধ্যেই বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। র্যাব-১৪ এর দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর অপরাধ দমনের লক্ষ্যে র্যাব ফোর্সেস অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে সমাজ তথা দেশকে বাঁচাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।সেই ধারাবাহিকতায় এই অভিযান। র্যাবের এই অভিযান চলমান থাকবে।