টাঙ্গাইলের সখিপুরের ক্লুলেস ও বহুল আলোচিত নৃশংসভাবে ব্যবসায়ী শাহজালালসহ জোড়া খুনের মূল হোতাসহ জড়িত ২ জন গ্রেফতার করেছে র্যাব।
নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ১৯ জুলাই ২০২৩ ইং খ্রি: রাতে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় দুর্বৃত্তরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে নৃশংসহভাবে শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাথাড়ি আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত শাহজালালের পিতা আবুল হোসেন (৬৫) বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-০৬/৫৮ তারিখঃ ২০ জুলাই ২০২৩, ধারা- ৩০২/৩৪, পেনাল কোড-১৮৬০। হত্যাকান্ডের ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসি মানববন্ধন করে। র্যাব উক্ত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
বিজ্ঞাপন
এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী শাহজালাল ও মজনু মিয়া হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারীসহ ২ জনকে গ্রেফতার করেন।
বিজ্ঞাপন
আসামীরা হলেন ১। মোঃ মোস্তফা মিয়া (২০) মুল পরিকল্পনাকারী পিতাঃ মোহাম্মদ আলী এবং তার সহযোগী আসামী ২. আলামিন (২৭), পিতাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম, বাঘেরবাড়ী, সখিপুর, টাঙ্গাইলদেরকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয় ভিকটিম শাহজালাল এর ব্যবহৃত ০২টি মোবাইল ফোন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে ।
বিজ্ঞাপন
জানা যায় যে, ভিকটিম শাহজালাল টাঙ্গাইলের সখিপুরের হামিদপুর বাজারে দীর্ঘদিন যাবৎ মনোহারি ও মোবাইল ব্যাংকিং এর ব্যবসা করে আসছিলেন। সে হামিদপুর বাজারের একজন জনপ্রিয় ও অতিপরিচিত ব্যবসায়ী। ভিকটিম শাহজালালের চাচা ভিকটিম মজনু মিয়া এলাকায় কৃষি কাজ করতেন। ভিকটিম মজনু মিয়া কৃষি কাজের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে শাহজালালকে ব্যবসায়িক কাজে দোকানে সহযোগিতা করতেন। ভিকটিম শাহজালাল ব্যবসায়িক কার্যক্রম শেষে প্রায়শই রাতের খাবার খেতে বাড়িতে যেতেন। তিনি মাঝে মধ্যে বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন এবং মাঝে মধ্যে দোকানে এসে রাত্রিযাপন করতেন। ভিকটিম শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সেই দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা (আনুমানিক দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা) বাড়িতেই রাখতেন। ঘটনার দিন ভিকটিম শাহজালাল দোকান বন্ধ করে বাড়িতে গমনকালে পথিমধ্যে তার চাচা মজনু মিয়াকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে একত্রে বাড়ি ফিরছিলেন এবং পথিমধ্যে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন।
বিজ্ঞাপন
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত মোস্তফার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে এই হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা এবং আলামিন উভয়ে স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য ছিল। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা সমিতি থেকে উ”চ সুদে বেশকিছু অর্থ লোন নেয়। এমতাবস্থায়, লোনের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ বহনের জন্য তার বেশকিছু অর্থের প্রয়োজন ছিল বিধায় সে পেশার বাহিরে অন্যায়ভাবে অর্থ উপার্জনের পরিকল্পনা করে। ভিকটিম শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সেই দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিং এর টাকা বাড়িতেই রাখার বিষয়টি গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও আলামিন জানত বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ভিকটিম শাহজালাল এর বাড়ি ফেরার পথিমধ্যে নির্জন স্থানেনে তাকে আক্রমণ করে তার নিকট হতে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য বেশকিছু দিন ধরে চিন্তা ভাবনা করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা বিষয়টি প্রায় কয়েক দিন পূর্বে গ্রেফতারকৃত আলামিনকে জানায় এবং গ্রেফতারকৃত আলামিন তাতে সম্মতি দেয়।
বিজ্ঞাপন
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ জুলাই ২০২৩ তারিখ আনুমানিক রাত ১০:০০ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও আলামিন টাঙ্গাইলের সখিপুরের বাঘেরবাড়ী এলাকায় জামালের চালায় নির্জন জঙ্গলে ওৎ পেতে থাকে। ভিকটিম শাহজালাল মোটরসাইকেল যোগে তার চাচা মজনু মিয়াকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ভিকটিম শাহজালাল এর মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ভিকটিম শাহজালালকে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। ভিকটিম শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। ভিকটিম মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনা স্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে গ্রেফতারকৃত আলামিন লোহার রড দিয়ে মজনু মিয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ও আলামিন মাটিতে লুটিয়ে থাকা ভিকটিম শাহজালাল ও মজনু মিয়াকে লোহার রড দিয়ে পুনরায় এলোপাথাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। গ্রেফতারকৃত আলামিন ভিকটিমদের সাথে থাকা মোটরসাইকেলটি পাশের একটি জমিতে ফেলে দেয় এবং গ্রেফতারকৃত মোস্তফা ভিকটিম শাহজালাল এর ০২টি মোবাইল ফোন নিয়ে ০১টি আলামিনকে দেয় এবং অপরটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তারা টাঙ্গাইল, গাজীপুর এবং ঢাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেফতারকৃত মোস্তফা টাঙ্গাইল এবং গ্রেফতারকৃত আলামিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারকৃত মোস্তফার দেখানো স্থানীয় একটি ডোবা থেকে ভিকটিম শাহজালালের একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গ্রেফতারকৃত আলামিন গত ০৩ মাস পূর্বে তার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। গ্রেফতারকৃত আলামিন ইতিপূর্বে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে গমন করেছিল এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরত আসে। গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় উশৃঙ্খল কর্মকান্ড করত বলে জানা যায়।
উক্ত গ্রেফতারকৃত আসামীদের সংশ্লিষ্ট আদালতে সোপর্দ করার নিমিত্তে সখিপুর থানায় ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব-১৪, সিপিসি-৩, টাঙ্গাইল ক্যাম্পকোম্পানী অধিনায়ক সিনিয়র সহকারী পরিচালকঅতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দীন মোহাম্মদ যোবায়ের, পিপিএম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আ¯’া অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।