টাঙ্গাইল শহর আ’লীগ নেতার বড় মনিরের বিরুদ্ধে অন্ত:স্বত্তা কিশোরীর ধর্ষণ মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক :টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন এক অন্ত:স্বত্তা কিশোরী। মামলায় বড় মনির স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামী করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
গোলাম কিবরিয়া বড়মনি টাঙ্গাইল জেলা এডভোকেট বার সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল গফুর এর ছেলে ও টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির এর বড় ভাই। কিশোরী মির্জা তাসমিম আফরোজ এশা টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী গ্রামের মরহুম মির্জা আব্দুল লতিফ এর মেয়ে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৫ এপ্রিল) রাতে ওই ভুক্তভোগী কিশোরী টাঙ্গাইল সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর ৮ তারিখ ০৫/০৪/২০২৩ ইং।
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই কলেজ ছাত্রীর বাবা ও মা মারা গেছেন। এর ফলে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার ভাইয়ের সাথে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। এ কারণে কিশোরী টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব ও টাঙ্গাইল-২ (ভ‚ঞাপুর-গোপালপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরের কাছে সহযোগিতা চায়। এতে বড় মনির তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাকে বাসায় ডেকে নেয়। পরে তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রস্তাব দেয়।
কিশোরী তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ছবি তুলে রাখে। পরবর্তিতে তুলে রাখা ছবি দেখিয়ে বারবার ওই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে বড় মনির। এতে বর্তমানে তিনি ৩ মাসের অন্ত:স্বত্তা। পরে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দেয় বড় মনির। কিশোরী সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে বড় মনি তার শ্বশুরবাড়ী আদালত পাড়ায় তুলে নিয়ে যান। সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এরপরও কিশোরী বাচ্চা নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় ওই বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন। পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের পর বড় মনির স্ত্রী তাকে মারপিট করেন। এতে কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌঁছে দেন। এরপর থেকেই তাকে নানা হুমকি দেয়া হতো। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
মামলা দায়ের পর বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে মেয়েটির মেডিকেল পরীক্ষা শেষে জবানবন্দির জন্য কোর্টে পাঠানো হয়েছে।
টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বলেন, এটি একটি ষড়যন্ত্র। টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একাত্তর টিভির সহযোগিতায় এ ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। সত্যতা পুলিশ তদন্ত আর মেডিকেল রিপোর্টে প্রকাশ পাবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, গোলাম কিবরিয়া বড় মনিরবিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেছে এক কিশোরী। মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিশোরীর শরীরে ধর্ষণে কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেয়েটি অন্ত:স্বত্বা বলে প্রাথমিক নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।