আগের বউয়ের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করলেন হাছেন নতুন বৌ পাচ্ছেনা স্ত্রীর মর্যাদা।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ১ ম স্ত্রীর মৃত্যুতে ২য় বিয় আর দ্বিতীয় বউয়ের অনুমতি ছাড়াই তৃতীয় দফায় বিয়ে করেছেন হাছেন নামের এক কৃষক। দুই লাখ টাকা দেন মোহরানা ধার্য করে তৃতীয় বিয়ে করলেও হতদরিদ্র নববধূকে এখনও দেয়া হয়নি স্ত্রীর মর্যাদা। অধিকার আদায়ের চেষ্টায় স্বামী হাছেনের বাড়িতে উঠায় দ্বিতীয় স্ত্রীর পাষবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ওই নববধূ। এছাড়াও বলপ্রয়োগ করে ছিনিয়ে নেয়াসহ নষ্ট করা হয়েছে বিয়ের নথিপত্র। স্বামীর বাড়ি ঠাঁই না পেয়ে বিচার প্রার্থণায় অসহায় নববধূ ঘুরছেন দ্বারে দ্বারে। স্ত্রীর অধিকার পেতে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, মানবাধিকারসহ ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন প্রতারনা শিকার ওই নববধূ।
বিজ্ঞাপন
চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল ইউনিয়নে।
বিজ্ঞাপন
অভিযুক্ত তিন কন্যা সন্তানের জনক হাছেন (৪৩) পাথরাইল ইউনিয়নের চিনাখোলা গ্রামের দারগ আলীর ছেলে। নববধূ রেহেনা বেগম একই উপজেলা ও ইউনিয়নের দেওজান গ্রামের মো. জব্বার আলীর মেয়ে। হাছেন পেশায় কৃষক আর রেহেনা চা বিক্রেতা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল সদর কাজীর কার্যালয়ে রেজিষ্ট্রিমূলে ও দুই লাখ টাকা দেন মোহরানায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিন কন্যা সন্তানের জনক হাছেন (৪৩) ও রেহেনা বেগম। যার রেজিষ্ট্রার নং-এ, বালাম নং ৭/২০২২, পৃষ্টা নং-৫৫। ওই বছরের ৮ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহের পরবর্তী ঘোষণাও দেয়া হয়। রোটারী পাবলিক এর রেজিষ্ট্রেশন নং- ৬৬৩৩।
বিজ্ঞাপন
স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, তিনটি কন্যা সন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করেন হাছেনের প্রথম স্ত্রী। ইতোমধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে হলেও একটি ছোট। প্রথম স্ত্রী মৃত্যুবরণ করায় দ্বিতীয় দফায় শাহানাজ বেগমকে বিয়ে করেন হাছেন। বিয়ে করলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর নেই কোন সন্তান। কৃষক হাছেনের বেশ কিছু জমিজমা রয়েছে। ফসলাদীর দেখভাল করাসহ ছেলে সন্তানের আশায় দ্বিতীয় দফায় বিয়ে করেন হাছেন। বিয়ের পর থেকেই ঠিক ফসল আসার সময় রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যান দ্বিতীয় স্ত্রী। এবারও ঠিক ধান আসার সময় রাগ করে বাপের বাড়ি চলে যান স্ত্রী শাহানাজ। ধান আনা নেয়ার কাজ করার জন্য রেহেনাকে বাড়ি আনেন হাছেন। এরপর বউয়ের উপর রাগ করে রেহেনাকে বিয়ে করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগি নববধূ রেহেনা বলেন, আমি স্বামী পরিত্যক্তা। মা নিয়ে এখানে বসবাস করি। সংসার চালানোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে একটি ছাপড়া তুলে চায়ের দোকান করেছি। হাছেন বন্ধুদের নিয়ে আমার দোকানে চা খেতে আসতেন। যাতায়ত করার সুযোগে আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। এ সময় থেকেই হাছেন আমাকে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তিনি বিবাহিত বলে আপত্তি করি। বিয়ে করার জন্য অবশেষে হাছেন বউ ছেড়ে দেয়াসহ বাড়ি ও জমিজমার লোভ দেখাতে শুরু করে। এতে আমি রাজি না হওয়ায় হাছেন তার বন্ধু চান মিয়া আর মোস্তফাকে দিয়ে প্রস্তাব দিতে থাকে। চান মিয়া আমাকে বলে হাছেনকে বিয়ে কর। হাছেন আগের বউকে ছেড়ে দিয়ে তোমাকে নিয়ে ঘর সংসার করবে। আমার বয়স হচ্ছে, নেই স্বামী বা ছেলে সন্তান সব কিছু ভেবে আমি বিয়েতে রাজি হই। এরপর ২০২২ সালে ৭ ডিসেম্বর কাজীর মাধ্যমে আমরা বিয়ে করি। বিয়ে করলেও হাছেন আমাকে তার বাড়ি উঠাননি। এর কিছুদিন পর থেকেই হাছেন, চান মিয়া ও মোস্তফা আমার দোকানে আসা বন্ধ করে দেয়। খবর পাই হাছেনের বউ আবার বাড়িতে আসছে। আমি বিভিন্ন ভাবে ও মাধ্যমে হাছেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে থাকি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, বাধ্য হয়ে ও স্থানীয়দের পরামর্শে স্ত্রী অধিকার আদায় করতে বিয়ের কাগজসহ হাছেনের বাড়ি গিয়ে উঠি। আমি বাড়িতে যাওয়ায় হাছেনের বউ শাহানাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ব্যাপক মারধর করাসহ আমার বিয়ের মূল কাগজপত্র ছিড়ে ফেলে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি আমি ওয়ার্ডের সাবেক ও বর্তমান ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় মাতাব্বরদের বলেও কোন সুরাহা পায়নি।আমি স্ত্রী অধিকার আদায় করার পাশাপাশি হাছেনের প্রতারনার বিচার দাবি করছি।
বিজ্ঞাপন
বিয়ের সহায়তাকারী হাছেনের বন্ধু চান মিয়া বলেন, কোর্ট ম্যারেজ এর মাধ্যমে হাছেন রেহেনাকে বিয়ে করেছে সেটি আমি জানি। তবে ওই বিয়ের স্বাক্ষী বা বিয়েতে কোন সহযোগিতা করিনি। এছাড়া ওরা বিয়ে করবে, এ কথাও আমি জানতাম না বলে জানান তিনি।আরেক বন্ধু ভ্যান চালক মোস্তফা বলেন, বিয়ের পর খবর পেয়েছি হাছেন রেহেনাকে বিয়ে করেছে। এছাড়া বিয়ের আগে বা পরের কিছুই আমি জানিনা। বিয়ের কিছুদিন আগে ওরা বিয়ে করবে এমন কথা শুনি। এ কারণে আমি রেহেনাকে বলি, তোমার আগে স্বামী আছে আর হাছেনের আছে বউ। এরপরও যদি কিছু কর সেটি ভেবে ও চিন্তা করেই কর।
বক্তব্য নিতে পরপর দুইদিন হাছেনের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও তিনি ফোন ব্যবহার করেন না বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী শাহানাজ।হাছেনের তৃতীয় স্ত্রীকে মারধর ও বিয়ের নথিপত্র ছিড়ে ফেলার কথা অস্বীকার করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী শাহানাজ। তিনি বলেন, হাছেন ও রেহেনা দুইজনই বিবাহিত। তাদের কেউই স্বামী বা স্ত্রীকে তালাম না দিয়ে কিভাবে বিয়ে বসলেন এমন প্রশ্ন আমার।
তবে বিবাহটি টাঙ্গাইল সদর মুসলিম বিবাহ ও তালাক নিবন্ধকের কার্যালয়ে হয়নি বলে জানিয়েছেন কাজী মো. রেজাউল করিম খান (রুমী)। বিবাহ বন্ধনের রেজিষ্ট্রেশনে সদর কাজীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের সর্বোচ্চ তিন ও চারটি বালাম ব্যবহার। এছাড়াও আমাদের বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনে রেজিষ্ট্রার নং, ক্রমিক নং, পাতার নং ও বালাম নং ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ওই গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য শফি মিয়া বলেন, লোকমুখে হাছেন ও রেহেনার বিয়ের কথা জানতে পেরেছি। তবে নতুন বউ এ ব্যাপারে কিছুই জানাননি।পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য সুলতান মিয়া বলেন, বিষয়টি আমি জানিনা। কেউ অবগত বা বিচার প্রার্থণা করলে অবশ্যয় তাকে সহযোগিতা করবো।
এ বিষয়ে পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রামপ্রশাদ জানান, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।